বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছিলেন মঙ্গল আর বৃহস্পতি গ্রহের কক্ষপথের মাঝের অংশে একটি গ্রহ থাকা উচিত। তারপর সেখানে ক্রমাগত অনুসন্ধান চালিয়ে অনেক ছোট ছোট গ্রহ আবিষ্কৃত হল। এগুলোকে ঠিক গ্রহ বলা চলে না, ঝাঁকে ঝাঁকে হাজারো অতি ক্ষুদ্রকায় গ্রহ নির্দিষ্ট কক্ষপথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে চলছে। বিজ্ঞানীরা এদের নাম রেখেছেন অ্যাস্টেরয়েডস (Asteroids)। বাংলায় বলা হয় গ্রহাণুপুঞ্জ।এখানকার একটি গ্রহকে বলে গ্রহাণু। এরা প্রধানত পাথর দ্বারা গঠিত। প্রথম গ্রহাণুর দেখা পাওয়া গিয়েছিল ১৮০১ সালে। মাত্র ৯৫০ কিলোমিটার ব্যাসের অধিকারী সিরিস বা সেরেস হল আজ পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে বড় গ্রহাণু। নিজস্ব অভিকর্ষের মাধ্যমে গোলকার আকৃতি লাভ করার জন্য এই ব্যাসই যথেষ্ট।ঊনবিংশ শতকে এটিকে ধরে নেয়া হয় গ্রহ হিসেবে। কিন্তু আরও বিস্তারিত পর্যবেক্ষণের পর এবং প্রতিবেশী অন্যান্য গ্রহাণু আবিষ্কৃত হওয়ায় ১৮৫০-এর দিকে এক গ্রহাণু হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। আর ২০০৬ সালে এসে একে পুনারায় বামন গ্রহ (Dwarf Planet) হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। । গ্রহাণুপুঞ্জের সকল গ্রহাণুর মোট ভরের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ভর পুঞ্জিভূত রয়েছে শুধু সেরেস গ্রহাণুতেই । এরপর আসে ভেস্তা, যা দ্বিতীয় বড় এবং ভারী গ্রহ। একে গভীর রাতের সম্পূর্ণ মেঘমুক্ত আকাশে খালি চোখে দেখা যায়। এর দূরত্ব সূর্য থেকে সেরেসের দূরত্বর চেয়ে একটু বেশি। এর দক্ষিণে অনেক সংঘর্ষ প্রাপ্ত হওয়ার অনেক গর্ত হয়ে গিয়েছে। তবে অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন সেখানে আগ্নেয়গিরি রয়েছে।ভেস্তার পরে ব্যাস অনুযায়ী অন্যান্য বড় গ্রহাণুগুলো হল পালাস(৫১২ কিমি), হাইজিয়া(৪৩৪ কিমি), ইউরোপা(৩১৫ কিমি), সিল্ভিয়া(২৮৬ কিমি)।এছাড়াও কিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রহাণুর সন্ধান পাওয়া গেছে। সেগুলো হল ইরোস, আমোর, এ্যাডোনিস, কাস্তালিয়া, অ্যালবার্ট, ফেথন ইত্যাদি। গ্রহাণুদের প্রত্যেকেরই আলাদা আলাদা কক্ষপথ রয়েছে। গ্রহাণুগলোর আকার অদ্ভুত হয়ে থাকে।মনে হয় কোনও ভাঙ্গা জিনিষের অংশবিশেষ। অনেক বিজ্ঞানীদের মতে এই গ্রহা্ণুগুলো একসময় ক্ষুদ্র একটি গ্রহ আকারে জমাট বেধেঁ ছিল। কিন্তু কোন কারনে মহাকাশে অজ্ঞাত বিপর্যয়ের কারণে হাজার হাজার খন্ডে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে। আবার অনেকের ধারণা গ্রহগুলির জন্মের সময় যে সব অতি ক্ষুদ্র বস্তুর সৃষ্টি হয়েছিল, হয়ত সেগুলো কোন কারণে জমাট বেঁধে বিরাট গ্রহে রূপান্তরিত হতে পারে নি। কিন্তু এই ভাঙাচোরা গ্রহ গুলো অন্যান্য গ্রহের মতই সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে শুরু করে দিয়ছিল। বেশ বড় চেহারার গ্রহাণুর উপাদান পর্যবেক্ষণ করে দেখা গিয়েছে তার মধ্যে আছে ৮০ ভাগ লোহা এবং ২০ ভাগ দস্তা বা নিকেল, ইরিডিয়াম, প্যালাডিয়াম, প্ল্যাটিনিয়াম, গোল্ড, ম্যাগ্নেসিয়াম, কার্বন(;ডায়মন্ড)।তবে কিছু গ্রহাণু এর মধ্যে পাওয়া যায় বিরল মৃত্তিকা মৌল, যেমন, রো্ডিয়াম, অসমিয়াম,রুদেনিয়াম, এগুলোর পরিমাণ অনুযায়ী মুল্য কয়েক বিলিয়ন থেকে কয়েক হাজার ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমান।
Future Asteroid Mining
আমরা ক্রমেই বিরল উপাদানগুলির উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠছি ,যা পৃথিবী থেকে উৎপাদন করা খুবই ব্যয়বহুল এবং এসব উপাদান যে পরিবেশে প্রক্রিয়াজাতকরণ করা হয় তাও ব্যয় বাড়িয়ে দেয় অনেকাংশে।গ্রহাণু খনন এর মাধ্যমে পৃথিবীর বিরল মৌল্গুলোর চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট নীল ডিগ্র্যাস যুক্তি দিয়েছিলেন যে গ্রহের প্রথম ট্রিলিয়নেয়ার নিঃসন্দেহে একজন স্পেস মাইনারই হবে। বর্তমানে গ্রহাণু খনন বা মাইনিং এর জন্য নাসা, স্পেস-এক্স সহ বেশ কিছু প্রাইভেট কোম্পানী কাজ করছে (Planetory Resources, ASTRcoin, Deep Space Industries etc.) । এসব প্রতিষ্ঠানের কিছু কার্যক্রমের সামান্য বিবরণ দিচ্ছিঃ
গ্রহাণুগুলো খুঁজে বের করা এবং বিরল পদার্থসমূহ আহরণ করার জন্য প্ল্যানেটারি রিসোর্স (Planetory Resources) কোম্পানি তিন ধরনের স্যাটেলাইটের পরিকল্পনা করেছে:
ü আর্কিড সিরিজ 100 (লিও স্পেস টেলিস্কোপ)- একটি কম ব্যয়বহুল যন্ত্র যা নিকটবর্তী গ্রহাণুতে কি সম্পদ পাওয়া যায় তা খুঁজে বের করা, বিশ্লেষণ করা এবং দেখার জন্য ব্যবহার করা হবে।
ü আর্কিড সিরিজ ২০০ (ইন্টারসেপ্টর) - একটি স্যাটেলাইট যা আসলে গ্রহাণুতে অবতরণ করবে ।
ü আর্কিড সিরিজ ৩০০ (রেন্ডেজভস প্রসপেক্টর)- এই স্যাটেলাইটটি গবেষণা এবং গভীর মহাকাশের বিভিন্ন সম্পদ অনুসন্ধানের জন্য কাজ করেছে।
ডিপ স্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ (Deep Space Industries) এর তৈরীকৃত উন্নত প্রযুক্তিসম্মত মহাকাশযানগুলো তিন ভাগে বিভক্ত:
ü ফায়ারফ্লাই হচ্ছে কিউবস্যাটেলাইট এর মত যা বিভিন্ন গ্রহাণুতে উৎক্ষেপণ করা হয় এবং সেগুলো পরীক্ষা করা হয়।
ü ড্রাগনফ্লাই মহাকাশযানের মাধ্যমে প্রায় 5-10 কেজি নমুনা সংগ্রহ করা এবং বিশ্লেষণের জন্য পৃথিবীতে ফেরত পাঠানো সম্ভব।
ü কয়েকশ টন নমুনা সংগ্রহের জন্য রয়েছে আলাদ মহাকাশযান বা স্পেসক্রাফট।
তবে গ্রহাণু খনেনের আগে জানতে হবে কোনটায় কি আছে এবং কোনটা আগে খনন করা দরকার। ধাতব গ্রহাণু বাM- type কমই দেখতে পাওয়া যায়, এগুলো তে প্রচুর আয়রন, নিকেলসহ রয়েছে গোল্ড এবং প্লাটিনাম। এদের সম্পদের পরিমাণ কয়েক হাজার কোয়াড্রিলিয়ন মার্কিন ডলারও হতে পারে। এরকম একটি সম্ভবনাময় গ্রহাণুর নাম হল “16-PSYCHE “. এই গ্রহাণুটি মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝখানে অবস্থিত, এবং আগামী ২০২২ সালে স্পেস-এক্স এর একটি মিশন এই গ্রহের উদ্দেশ্য পরিচালিত হবে।
এছাড়া আছে পাথুরে গ্রহাণু বা S-type, যেগুলো শুধুমাত্র সিলিকন দ্বারা তৈরী, এগুলো বড় কোন স্পেস ষ্টেশন এর জন্য কাজে লাগানো সম্ভব।
সবচেয়ে বেশি পরিমাণে আছে কার্বনেশিয়াস (C-type) গ্রহাণু যার ভেতরে আছে পানি, অর্থ্যাৎ হাইড্রোজেন-অক্সিজেন। মহাকাশে এ পানির উৎস খুবই কার্যকরী, আমরা অক্সিজেন কে রকেট ফুয়েল হিসেবে ব্যবহার করতে পারব, স্পেস স্টেশন বা রকেটগুলোতে লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমে এবং রেডিয়েশন শিল্ডিং হিসেবে ব্যবহার করতে পারব। তাছাড়া বছরের পর বছর মহাকাশচারীদের বিভিন্ন মিশনে টিকে থাকতে বা স্পেস স্টেশনে থাকার জন্য দরকার হয় পানি। আজকে দোকানে যেই ৫ লিটার পানির দাম পড়ে ৭৫ টাকা, সেখানে প্রতি লিটার পানি স্পেসে পাঠাতে খরচ পড়ে প্রায় ২৫০০ ডলার বা ২ লক্ষ ১২ হাজার টাকা। একেকটা গ্রহাণুকে আমরা পেট্রোল পাম্পের সাথে তুলনা করতে পারি, আমরা আমাদের নিজেদের গাড়ি নিয়ে দেশের যেকোন জায়গায় যেতে পারব যদি পথে পথে আমরা পেট্রোল পাম্প পাই, মানে আমরা যদি এভাবে গ্রহাণু খনন করে জ্বালানি এবং পানির সরবরাহ পাই তবে আমরা একদিন এই সৌরজগতে আনাচে কানাচে ঘুর বেড়াতে পারব।
অন্ধকার মহাকাশে এসব গ্রহাণুকে চিহ্নিত করার জন্য নিওক্যাম (Near Earth Object Camera) তৈরী করছে নাসার বিজ্ঞানীরা। গ্রহাণু খনন করার জন্য বর্তমানে কাজ করছে জাপানের স্পেস প্রোব Hayabusa 2, স্পেস প্রোব হল রবোটিক স্পেসক্রাফট যা পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরে না, বরং স্পেস ট্রাভেল করে। Hayabusa ২০০৫ সালে একটি সফল মিশনের মাধ্যমে ২০১০ এ পৃথিবীতে ফেরত এসে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়, Hayabusa2 ছিল এর পরবর্তী মিশন। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে স্পেসক্রাফটি(Hayabusa 2) রিয়ুগু(Ryugu) গ্রহাণু এর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। প্রায় পাঁচ বছর পর এটি রিয়ুগুতে পদার্পণ করে এবং এক বছরের একটি অভিযানের মাধ্যমে গ্রহাণুটির কিছু তথ্য ও মাটি সংগ্রহ করে গত ৬ ডিসেম্বর ২০২০ এ পৃথিবীতে ফেরত আসে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন প্রাপ্ত মাটির নমুনায় কার্বন এবং জৈব পদার্থের চিহ্ন রয়েছে। শুধু তাই নয়, জাপানের বিজ্ঞানীরা আশা করছেন আমাদের সৌরজগতে এসব পদার্থ কিভাবে গ্রহ-গ্রহাণু থেকে প্রাণের সৃষ্টি ঘটিয়েছে সেই রহস্যের উত্তর খুঁজে পাবে একদিন। কারণ গ্রহাণু হল সৌরজগতের প্রাচীনতম বস্তুগুলির মধ্যে একটি। এরপর কথা বলব, নাসার OSIRIS-Rex মিশনের কথা। এই স্পেসক্রাফটি একটি বি-টাইপ গ্রহাণুর উদ্দেশ্যে রওনা করেছে ২০১৬ সালে। কাঙ্ক্ষিত গ্রহাণুর নাম হল “ Bennu “, যাতে রয়েছে প্রাচীন কার্বনেশিয়াস পদার্থ। এই জাতীয় গ্রহাণুগুলি তাদের গঠনের সময় থেকে খুব কম ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তন পেয়েছিল, তাই এসব গ্রহাণু"আদিম" গ্রহাণু নামে পরিচিত। 3 ডিসেম্বর 2018 এ, নাসা নিশ্চিত করেছে যে স্পেসক্রাফটি, কার্যকরভাবে গ্রহাণুতে পৌঁছেছিল।
2019 সালের আগস্টে চূড়ান্ত চারটি নমুনা সাইট নির্বাচন করা হয়েছিল “Bennu” তে, যেগুলোর নাম ছিল নাইটিংগেল, কিংফিশার, অস্প্রি এবং স্যান্ডপাইপার। স্পেসক্রাফটি সফলভাবে 2020 এর অক্টোবর মাসে গ্রহাণু এর নমুনা সঞ্চয় করে, এবং আশা করা হয় এটি ২০২৩ সালে পৃথিবীতে ফেরত আসবে। এই সম্পূর্ণ মিশনের খরচ ছিল ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
OSIRIS-Rex collecting sands from Bennu
গ্রহাণুগুলো একই সাথে যেমন ছোট হয় তেমন এদের অভিকর্ষজ বল অনেক কম হয়। অভিকর্ষ্জ বল কম হওয়ার কারণে, খুব সহজেই এগুলোতে অবতরণ কিংবা প্রস্থান করা যায়।কিন্তু খননের জন্য যে পরিমাণ অভিকর্ষ বল থাকার দরকার তা নেই, ফলে যেকোন গ্রহাণু অতি সহজেই ভেঙ্গে যাবে যদি আমরা পৃথিবীর মত প্রচুর বল প্রয়োগ করে খনন করতে চাই।এজন্য ডঃসেরসেল এবং তার TransAstra কোম্পানী তৈরীকরছে“অপ্টিকাল মাইনিং”। এখানে থাকবে “মিনি বি” নামক একটি স্পেস ক্রাফট, যা কোন গ্রহাণুকে নির্দিষ্ট ঘেরের নিয়ন্ত্রণে নিতে পারবে। এতে রয়েছে ২টি বিশাল, খুব হাল্কা, সরু সোলার রিফ্লেক্টর ফিল্ম। এই ফিল্মগুলো সূর্যের বিপুল আলোক শক্তিকে একটি ক্ষুদ্র জায়গায় ঘনীভূত করবে।তারপর এই আলোক শক্তি গ্রহাণু এর উপর শক ওয়েভ সৃষ্টি করবে,একটি লেজার গান হিসেবে কাজ করবে, এভাবে ই গ্রহাণু খনন করে অতি মূল্যবান পদার্থ পাওয়া সম্ভব। তবে সূর্য থেকে যখন অনেক দূরে যাবে এই মিনি বি, তখন দরকার হবে নিউক্লিয়ার শক্তির।অ্যাস্টেরয়েড মাইনিং শুধু মাত্র পৃথিবীর জন্য নয়,ভবিষ্যত মানব সভ্যতা যাতে বছরের পর বছর স্পেস ট্রাভেল এবংমঙ্গল বা চাঁদে বা অন্য যেকোন গ্রহে বসতি স্থাপন করতে পারে, সেজন্য শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করবে।
গ্রহাণু খননের মাধ্যমে আমরা যদি কখন এই বিপুল সম্পদ পৃথিবীতে নিয়ে আসতে পারি, তা অবশ্যই বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বিরুপ প্রভাব ফেলবে, মুদ্রাস্ফীতি ঘটবে ব্যাপক ভাবে, তখন সবার হাতেই হয়ত লক্ষ লক্ষ টাকা থাকবে, মানুষের জন্য মহাকাশে ঘুরে বেড়ানো খুব সাধারণ হয়ে যাবে। এই সম্পদের বন্টন নিয়েও রয়েছে নানা মতবিরোধ, ১৯৬৭ সালে বিশ্বের প্রায় ১০০ টি দেশের মধ্য একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার নাম হল“Outer Space Treaty”. এই চুক্তির মাধ্যমে মহাকাশে অস্ত্রের ব্যবহার, সামরিক অভিযান বা হস্তক্ষেপের উপর নিষেধাজ্ঞা স্থাপন করা হয় এবং এই বিপুল সম্পদের বন্টন কিভাবে করা হবে তা নিয়েও নীতিমালা প্রকাশ করা হয়। তবে অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন আমরা খুব তাড়াতাড়ি কোন গ্রহাণু খনন দেখতে পাব না, কারণ এটি খুবই ব্য্যবহুল। একটুআগেআমরাযেইHyabusa 2 এরকথাবলছি, তাদিয়েরিয়ুগুগ্রহাণুরএকগ্রাম মাটিপৃথিবীতেআনতেখরচপড়েছে১৫৭মিলিয়নমার্কিনডলার।
স্পেস-এক্স এর ফ্যাল্কন হ্যাভী এর কথা বলছি, যার প্রত্যেক কেজি ভর উত্তোলনের জন্য খরচ পড়েছে ৫৩৫৭ ডলার, সেখানে হাফ টনের এরকটা মাইনিং মেশিন মহাকাশে নিয়ে যাওয়ার খরচ একেকটা মাইনিং কোম্পানীর পুরো এক বছরের বাজেটের সমান! এরপরে আমরা যদি আমদের আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের কথা ধরি, এটির ৩৫০০ স্কোয়ার ফিট বিস্তৃত সোলার সেল্গুলো প্রায় ১২০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে থাকে। এসব খননের কাজে ব্যবহৃত মাইনিং মেশিন এবং স্পেসক্রাফটেও সমপরিমাণ শক্তির প্রয়োজন পড়বে, যা শুধু মাত্র সৌরশক্তি দিয়ে চালানো সম্ভব না। অপরদিকে মহাকশে পারমাণবিক বা নিউক্লিয়ার শক্তির ব্যবহার এখনও এত ব্যাপকভাবে শুরু হয় নি। সাম্প্রতিক সময়ে লাল গ্রহ বা আমাদের প্রিয় মঙ্গল গ্রহে যে পারসিভেরেন্স পাঠানো হয়েছেতারশক্তিরউৎসছিলপারমানবিকব্যটারী।একদমসহজভাষায়বলাযায়, প্লূটোনিয়ামমৌলেরতেজস্ক্রিয়ভাঙনেরমাধ্যমেযেবিপুলপরিমাণেশক্তিরসৃষ্টিহয়তাকাজেলাগিয়েইমঙ্গলেরবুকবেয়েএগিয়েযাচ্ছেপারসিভেরেন্স।কয়েকদশকধরেকাজচলছেপারমানবিকরকেটের, গ্রহাণুখননবাদূরেরমহাকাশেঅনুসন্ধানচালাতেপারমানবিকশক্তিরকোনবিকল্পনেই।
কোনও বড় মাপের গ্রহের পাশ দিয়ে যাবার সময় অভিকর্ষের টানে গ্রহাণু তার নিজ কক্ষপথ থেকে বেরিয়ে এসে প্রচন্ড বেগে ধাবিত হয়ে গ্রহ কিংবা উপগ্রহের উপর আছড়ে পড়তে পারে।চাঁদের বুকে অথবা মঙ্গল গ্রহের পিঠে যে ক্ষত দেখা যায় তা এই গ্রহাণুর আঘাতের ফলেই সৃষ্টি হয়েছে।বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, প্রায় ৬৫ মিলিয়ন বছর আগেপরপর দুটি অ্যাস্টেরয়েড আঘাত করে পৃথিবী থেকে ডাইনোসরকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে ফেলে ।এছাড়া প্রায় বিভিন্ন সময় পৃথিবী তে আছড়ে পড়েছে অনেক উল্কা।
বি 612 একটি বেসরকারী অলাভজনক ফাউন্ডেশন, যা গ্রহাণুঘটিত স্ট্রাইক থেকে পৃথিবীকে রক্ষার জন্য নিবেদিত। বেসরকারী সংস্থা হিসাবে, এটি গ্রহাণু সনাক্তকরণের পথকে সুগম করার জন্য গবেষণা করছে। কোন কোন গ্রহাণু ভবিষ্যতে পৃথিবীকে আঘাত করতে পারে, এবং এ জাতীয় সংঘর্ষ এড়াতে এসব গ্রহাণুর পথ কিভাবে পরিবর্তন করা যায় সেসব প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে তারা।
যদি কখনো কোন গ্রহাণু পৃথিবীর দিকে প্রচন্ড শক্তিতে ধেয়ে আসে তখন নাসাও কিছু প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। নাসা প্রথমত এমন একটি স্পেস ক্রাফট পাঠাবে যা গ্রহাণুটির সাথে সংঘর্ষ করে তাকে বেশ দূরে সরিয়ে দিবে অথবা একটি“গ্র্যাভিটি ট্রাক্টর” দিয়ে গ্রহাণুটির দিক পরিবর্তন করে দিবে কিংবা একটি নিউক্লিয়ার লেজার দিয়ে গ্রহাণুটিকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে ফেলবে,এছাড়া কাজ চলছেDART(Double Asteroid Redirection Test) এর |
Double Asteroid Redirection Test(2022)
ডিডিমোস হল ইদা এর মত একটি গ্রহাণু যার নিজস্ব চাঁদ রয়েছে। চাঁদ বলতে একটি অপেক্ষাকৃত ছোট গ্রহাণু, যা বড় গ্রহাণুর চারদিকে একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে আবর্তন করে। এ ধরনের গ্রহাণুগুলোকে ডাবল অ্যাস্টেরয়েড বলা হয়ে থাকে।ডার্ট হ'ল একটি পরিকল্পিত স্পেস প্রোব যা ডাবল গ্রহাণু ডিডিমোস পরিদর্শন করবে। আমাদের গ্রহের প্রতিরক্ষা উদ্দেশ্যে ডিডিমোসের এর চাঁদ স্বরূপ গ্রহাণুতে এই মহাকাশযানটি ক্র্যাশ করার পরীক্ষা চালানো হবে, এর গতীয় প্রভাবগুলো নিয়ে গবেষণা করা হবে, দেখা হবে যে গ্রহাণুটি ধ্বংস করার পর এর কোন টুকরো বা অংশ পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে কিনা।
এখন কথা বলব কিছু গ্রহাণু নিয়ে যা পৃথিবীর খুব কাছ দিয়ে ঘেঁষে যাবে আগামী দিনগুলিতেঃ
99942 অ্যাপোফিস এমন একটি গ্রহাণু যার ব্যাস হল 370 মিটার। আশা করা হচ্ছে যে এই গ্রহাণুটি 13 এপ্রিল, 2029-এ আমাদের গ্রহ থেকে মাত্র ২৩,৪৪১ মাইল দূর দিয়ে পেরিয়ে যাবে, তখন এটি খালি চোখে সহজেই দৃশ্যমান হবে। এটি আবারও ২০৩৬ সালেও পৃথিবীর কাছ দিয়ে যাবে এবং আরও দৃঢ়ভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে 2068 সালে দৈত্য অ্যাপোফিস পৃথিবীতে আঘাত হানবে।এটিও ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে যে সংঘর্ষের পরে ধ্বংসাত্মক পরিণতি হিরোশিমা পারমাণবিক বিপর্যয়ের চেয়ে 65,000 গুণ বেশি হতে পারে। জ্যোতির্বিদরা এখনও বিশ্বাস করেন যে 2068 সালে এই গ্রহাণুটি ইউরোপের কোথাও আঘাত হানতে পারে।
(153814) 2001 WN5 গ্রহাণুটির ব্যাস প্রায় .৯ কিলোমিটার। গ্রহাণুটি পৃথিবী থেকে ২৬ জুন ২০২৮-এ ২ লক্ষ ৫০ হাজার কিলোমিটারের মধ্য দিয়ে চলে যাবে।
2010 RF12 একটি অতি ক্ষুদ্র গ্রহাণু, যা পৃথিবী ও চাঁদের মধ্য দিয়ে যায় ৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ এ। এটি অ্যান্টার্কটিকার ৭৯,০০০ কিলোমিটার (৪৯,০০০ মাইল) এর কাছে পৌঁছেছিল। এটি সেন্ট্রি রিস্ক টেবিলে গ্রহাণু হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়েছে এবং ধারণা করা হয়, ২০৯৫ সালে এটি পৃথিবীকে আঘাত করতে পারে, আঘাত করার সর্বাধিক সম্ভাবনা ৫% ।আপনার আগ্রহ থাকলে “দ্য স্কাই লাইভ” নামক ওয়েবসাইট থেকে কোন গ্রহাণু কবে পৃথিবীর পাশ দিয়ে যাবে, কত কাছ দিয়ে যাবে, গতিবেগ কত, ব্যাস কত তা দেখে নিতে পারেন।
সৃষ্টির প্রথম ক্ষণ থেকে এক অসীম রহস্যের আড়ালে লুকিয়ে আছে আমাদের মাথার উপর ছড়ানো অনন্ত সীমাহীন নীল আকাশ। তার বৈচিত্র্য আর বিস্ময় মানুষকে যুগ যুগ ধরে নানা ভাবে প্রলুব্ধ করেছে, প্রেরণা জুগিয়েছে অজানাকে জানার, অচেনাকে চেনার। তাই তো মানুষ আজ এই মর্তলোকের সীমা ছাড়িয়ে পাড়ি জমাতে চায় ঐ নীলাকাশে । হয়তো ঘর বাঁধতে যায়। আর ঐ মহাকাশও যেন এক বিশ্বলোকের অপার বিস্ময় নিয়ে প্রতীক্ষায় আছে হাজার-লক্ষ-কোটি বছর ধরে।
References:
ü https://en.wikipedia.org/wiki/Asteroid
ü https://www.ventureradar.com/keyword/Asteroid%20mining
ü https://www.nasa.gov/planetarydefense/dart/
ü https://theskylive.com/near-earth-objects
ü https://www.transastracorp.com/optical-mining.html
ü https://www.ipac.caltech.edu/project/neocam
ü https://www.youtube.com/watch?v=uqHXiJ5pGLY
ü https://en.wikipedia.org/wiki/C-type_asteroid
ü https://www.space.com/asteroid-1998-or2-earth-flyby-april-2020.html
ü https://www.nasa.gov/planetarydefense/dart
ü https://www.armscontrol.org/factsheets/outerspace
ü https://earthsky.org/space/asteroid-99942-apophis-encounters-2029-2036-2068
ü https://mars.nasa.gov/mars2020/spacecraft/rover/electrical-power/
ü https://www.bbvaopenmind.com/en/science/physics/asteroid-mining-a-new-space-race/
ü রহস্যময় মহাকাশ-হাফেজা হক অদ্বিতী(Book)
ü Blair, Brad & Gertsch, Leslie. (2010). Asteroid Mining Methods.
ü Hein, Andreas M. & Matheson, Robert & Fries, Dan. (2019). A techno-economic analysis of asteroid mining. Acta Astronautica. 168. 10.1016/j.actaastro.2019.05.009.